Thursday, October 23, 2025
Homeজীবনযাপন৭ ধরনের মানুষের জন্য ওরস্যালাইন হতে পারে বিপদ

৭ ধরনের মানুষের জন্য ওরস্যালাইন হতে পারে বিপদ

গরমে ঘেমে একেবারে হাঁপিয়ে গেলে বা ডায়রিয়ায় পানিশূন্যতা হলে আমরা অনেকেই ওরস্যালাইন খাই। সহজে বানানো যায়, শরীরকে দ্রুত চাঙ্গা করে—এমন ধারণা আমাদের সবার।

কিন্তু জানেন কি? সবার জন্য ওরস্যালাইন উপকারী না-ও হতে পারে। কখনো কখনো এটি শরীরের জন্য উল্টো ক্ষতির কারণও হয়ে দাঁড়ায়, বিশেষ করে যদি আপনি নিজে থেকেই, না বুঝে বা অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওরস্যালাইন খেলে কিছু মানুষের জন্য এটি কিডনি, হৃৎপিণ্ড বা স্নায়ুর জটিল সমস্যা ডেকে আনতে পারে।

চলুন দেখে নিই, কারা সাবধানে থাকবেন এবং কখন ওরস্যালাইন খাওয়া থেকে বিরত থাকা ভালো।

যাদের জন্য ওরস্যালাইন হতে পারে ঝুঁকিপূর্ণ:

১. ডায়াবেটিস রোগী: ওরস্যালাইনে গ্লুকোজ থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। ডায়াবেটিক বা ইনসুলিন-রেজিস্ট্যান্ট ব্যক্তিরা বেশি খেলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে।

২. যারা কিডনি সমস্যায় ভুগছেন: ওরস্যালাইনের লবণ ও খনিজ উপাদান বেশি মাত্রায় কিডনিতে চাপ ফেলে। ফলে কিডনি ফিল্টার করতে গিয়ে অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে কিডনির জন্য ক্ষতিকর।

৩. উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগে আক্রান্তরা: ওরস্যালাইনের সোডিয়াম রক্তচাপ বাড়াতে পারে। আগে থেকেই উচ্চ রক্তচাপ বা হার্টের সমস্যা থাকলে এটি হঠাৎ করে শারীরিক জটিলতা বাড়িয়ে দিতে পারে।

৪. ডায়রিয়া না থাকলেও যারা ঘনঘন খান: ওরস্যালাইন মূলত পানিশূন্যতা মোকাবিলার জন্য, বিশেষ করে ডায়রিয়া হলে। কিন্তু ডায়রিয়া বা সঠিক কারণ ছাড়া নিয়মিত খেলে শরীরের ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

৫. খেলাধুলা বা গরমে ক্লান্ত হলে যারা ওরস্যালাইন খান: অনেকেই গরমে বা খেলাধুলার সময় শরীরের শক্তি ফেরাতে ওআরএস (ORS) খান। অথচ এ সময় সাধারণ পানি বা ফলের শরবতই যথেষ্ট। ওরস্যালাইন খেলে উল্টো পেট খারাপ বা ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা হতে পারে।

৬. বয়স্ক ও দুর্বল রোগীরা: বয়স বাড়ার সঙ্গে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ দুর্বল হয়। এ সময় অতিরিক্ত লবণ বা গ্লুকোজ শরীর নিতে না পারলে ক্ষতি হতে পারে। বিশেষ করে যাদের হজম বা কিডনি সমস্যা রয়েছে।

৭. যারা নিজেরাই চিকিৎসা এড়িয়ে শুধু ওরস্যালাইন খেয়ে থাকেন: অনেকেই ডায়রিয়া বা অসুস্থ বোধ করলেই শুধু ওরস্যালাইন খেয়ে মনে করেন, এটাই যথেষ্ট। অথচ ভেতরে সংক্রমণ বা অন্য জটিলতা থেকে গেলেও চিকিৎসা না নিলে সমস্যা বাড়তেই পারে।

অতিরিক্ত ওরস্যালাইনের যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে:

– হাইপারনেট্রেমিয়া: রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে গিয়ে খিঁচুনি, মাথাব্যথা বা বিভ্রান্তি হতে পারে।

– ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা: পেশি দুর্বলতা, ক্লান্তি বা স্নায়বিক সমস্যা।

– কিডনিতে পাথর বা জটিলতা।

– রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া।

– পেট খারাপ বা ডায়রিয়া।

– 

তাহলে কী করণীয়?

– শরীরে পানিশূন্যতা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

– ডায়রিয়া বা অতিরিক্ত ঘামের মতো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া ওরস্যালাইন খাবেন না।

– শরীরের যে কোনো জটিল লক্ষণ দেখা দিলে ওআরএস খেয়ে অপেক্ষা না করে চিকিৎসা নিন।

– ওরস্যালাইন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তা সঠিক সময়ে, সঠিক কারণেই ব্যবহারযোগ্য। না বুঝে খেলে উপকারের বদলে বিপদ বাড়তে পারে। তাই নিজে থেকেই নয়, প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওরস্যালাইন ব্যবহার করুন এবং শরীর সুস্থ রাখুন।

RELATED ARTICLES

Most Popular