রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো সেকশনে লাগা ভয়াবহ আগুনে বিলিয়ন ডলারের (১০ হাজার কোটি টাকার) বেশি ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। ইন্টারন্যাশনাল এয়ার এক্সপ্রেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএইএবি) সভাপতি কবির আহমেদ শনিবার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় এ উদ্বেগের কথা জানান।
আমদানি পণ্যের গোডাউনে আগুন লাগায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা এই অগ্নিকাণ্ডের জন্য অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন এবং তাদের আশঙ্কা, একটি ওয়্যার হাউস ও এয়ার এক্সপ্রেস ইউনিট পুরোপুরি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আইএইএবি সভাপতি কবির আহমেদও নিশ্চিত করেছেন যে, “এয়ার এক্সপ্রেস ইউনিট পুরোপুরি পুড়ে গেছে।”
ব্যবসায়ীদের ওপর প্রভাব
বিমানবন্দরের সিএন্ডএফ (কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং) একজন কর্মচারী বলেন, কার্গোতে রাখা সব কাপড়চোপড় ও কেমিক্যাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে আগামী দুই-তিন মাস হয়তো তাঁদের কোনো কাজই থাকবে না।
কুরিয়ারের মাস্টার ইয়ার কোম্পানির সিএনএফ এজেন্ট মো. রোকন মিয়া জানান, প্রতিদিন টন টন মাল কার্গো হয়ে আসে, তাই এই ঘটনায় ব্যবসায়ীরা বিশাল ক্ষতির মুখে পড়বেন। স্কাই লাউঞ্জে কেমিক্যাল, ফেব্রিক, মেশিনারিজসহ বিভিন্ন ধরনের মালামাল রাখা হতো। তাঁর ধারণা, কেমিক্যাল থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে এবং তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।
তামিম এক্সপ্রেস লিমিটেডের পরিচালক সুলতান আহমেদ শঙ্কা প্রকাশ করেন যে, সেদিন দুপুরেই তাঁদের আড়াই টন আমদানি করা গার্মেন্টস পণ্য কার্গো সেকশনে নামানো হয়েছিল, যার সবটাই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
আমদানি সেকশনে কর্মরত সোহেল মিয়া জানান, আট নম্বর গেটের সঙ্গে লাগানো কুরিয়ার সার্ভিসের গোডাউন, এরপর ফার্মাসিউটিক্যালস ও ভ্যারাইটিজ পণ্যের গোডাউন এবং মাঝখানে কুল রুম, বিস্ফোরকদ্রব্যের গোডাউন ও আমদানি করা মোবাইলের গোডাউন ছিল। তিনি জানান, বিস্ফোরকদ্রব্যের গোডাউনেও আগুন লেগেছিল এবং সেখানকার বিস্ফোরকদ্রব্য বিকট আওয়াজ করে ফুটছিল।
অগ্নিকাণ্ড ও উদ্ধার তৎপরতা
উল্লেখ্য, শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিটের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিজিবির বিভিন্ন ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অল্প সময়ের মধ্যেই আগুনের তীব্রতা মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়। আগুন থেকে রক্ষা করতে উড্ডয়নের অপেক্ষায় থাকা উড়োজাহাজগুলো নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়।
আগুন লাগার কারণে উড়োজাহাজ ওঠা-নামা বন্ধ থাকায় ঢাকামুখী ৮টি ফ্লাইট চট্টগ্রামে এবং একটি ফ্লাইট সিলেটে অবতরণ করে। এতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।