রাঙামাটিতে প্রায় সাড়ে চার মাস ধরে নিখোঁজ থাকা কৃষক দিদার আলমকে (২৮) খুন করেছেন তাঁর স্ত্রী কোহিনূর আক্তার—এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে। স্বামীকে হত্যা করার পর লাশ গোপন করার বিষয়েও বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।
কীভাবে ঘটেছিল হত্যাকাণ্ড
পিবিআইয়ের তদন্তে জানা যায়, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই কলহ হতো। দিদার আলম স্ত্রীর খালেকের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের কথা জানলেও হামজার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি জানতেন না। এই বিরোধ থেকেই খুনের পরিকল্পনা করা হয়।
হামজা কোহিনূরকে চারটি ঘুমের ওষুধ এনে দেন। গত ৩০ মে রাতে কোহিনূর খাবারের সঙ্গে ওষুধ মিশিয়ে স্বামীকে খাওয়ান। দিদার গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লে কোহিনূর তাঁকে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।
এরপর পাশের স্কুল মাঠে লুডু খেলছিলেন হামজা ও সেলিম। খুনের ঘটনা জানিয়ে কোহিনূর তাঁদের ডেকে আনেন। পরে একটি প্লাস্টিকের চাটাইয়ে দিদারের লাশ মুড়িয়ে তিনজনে মিলে পাশের খালে ফেলে দেন। প্রবল বৃষ্টিতে স্রোতের সঙ্গে লাশ ভেসে যায়।
গ্রেপ্তার মো. হামজা ও মো. সেলিম
তদন্ত ও গ্রেপ্তার
দিদারের নিখোঁজের ঘটনায় প্রথমে থানায় জিডি করেন তাঁর বাবা জামির হোসেন। পরে মামলা করেন তিনি। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই।
তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গত ৪ অক্টোবর গাজীপুর থেকে কোহিনূর ও খালেককে গ্রেপ্তার করা হয়। রিমান্ড শেষে কোহিনূর আদালতে হত্যার স্বীকারোক্তি দেন। এর পরপরই গ্রেপ্তার হন হামজা ও সেলিম। তাঁরাও ঘটনায় জড়িত থাকার কথা আদালতে স্বীকার করেছেন।
লাশ উদ্ধার হয়নি এখনো
পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, এখন পর্যন্ত দিদারের লাশ উদ্ধার সম্ভব হয়নি। সেদিন খালে পানির স্রোত অত্যন্ত প্রবল থাকায় লাশ দ্রুত ভেসে যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তদন্ত কর্মকর্তাদের ভাষ্য, কোহিনূর একসঙ্গে হামজা ও খালেকের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতেন। ঘটনার কয়েক মাস আগে স্বামীকে তালাক দেওয়ার জন্য গোপনে আবেদনও করেছিলেন তিনি। হত্যার পর প্রেমিক হামজার পরিকল্পনায় লাশ গোপন করে আরেক প্রেমিক খালেককে বিয়ে করে গাজীপুরে চলে যান।
নিহতের পরিবারের দাবি
নিহত দিদারের বাবা জামির হোসেন বলেন, “চার মাস পার হলেও আমি এখনো ছেলের লাশ পাইনি। এ ঘটনায় জড়িত সবার ফাঁসি চাই।”