Thursday, October 23, 2025
Homeবাংলাদেশযুক্তরাষ্ট্রে সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের 'সম্পদের পাহাড়'

যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের ‘সম্পদের পাহাড়’

৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর আত্মগোপনে চলে যাওয়া সাবেক ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে সপরিবারে বিলাসী জীবনযাপন করছেন। দেশ থেকে অবৈধভাবে পাচার করা অর্থে তিনি বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান ও সম্পদ

হারুন অর রশীদ তার পরিবারের সদস্যদের ১ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দেন এবং আগস্টের শেষদিকে ভারত হয়ে মার্কিন পাসপোর্ট ব্যবহার করে নিজেও সেখানে পাড়ি জমান। তিনি ও তার স্ত্রী উভয়েই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। ডালাসে তার একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের নিউ হাইড পার্ক এলাকায় হারুনের স্ত্রীর নামে ৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি বাড়ি কেনার তথ্য রয়েছে। ওই সময় বিপুল অর্থ লেনদেন শনাক্ত করে এফবিআই (FBI) এর তদন্তও করেছিল। জানা যায়, হারুনের স্ত্রীর নামে একটি ব্যাংকে থাকা প্রায় ১,৫৩২ কোটি টাকা বর্তমানে এফবিআইয়ের সুপারিশে আটকে আছে।

ছয়টি দেশে অর্থ পাচার ও বিনিয়োগ

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, হারুন সরাসরি বাংলাদেশ থেকে কম অর্থ পাচার করে অন্তত ছয়টি দেশে বিনিয়োগের মাধ্যমে সেই অর্থ বৈধ উপায়ে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে গেছেন। এই দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে:

দুবাই ও শারজাহ (সংযুক্ত আরব আমিরাত): এখানে তার দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, একটি রেস্তোরাঁ, একটি মানি এক্সচেঞ্জ এবং এডিসি সাইফুলের ভাই রিফাতের সঙ্গে স্বর্ণের ব্যবসা রয়েছে।

মালয়েশিয়া: তিনি ও তার স্ত্রী ‘সেকেন্ড হোম’ স্কিমে বিনিয়োগ করেছেন। কুয়ালালামপুরে তাদের রেস্তোরাঁ ও মানি এক্সচেঞ্জ রয়েছে।

তুরস্ক: হারুন সেখানে বিনিয়োগকারী হিসেবে দেশটির নাগরিকত্বও লাভ করেছেন।

সৌদি আরব (জেদ্দা): কথিত মামা জাহাঙ্গীরের এক বন্ধুর মাধ্যমে একটি আবাসিক হোটেলে তার বিনিয়োগ আছে।

সুইজারল্যান্ড: মার্কিন নাগরিক হিসেবে একটি সুইস ব্যাংকে তার অ্যাকাউন্ট থাকার তথ্য পেয়েছে সিআইডি।

মানি লন্ডারিংয়ের কৌশল

অর্থ পাচারের সুবিধার জন্য হারুন একটি নিজস্ব মানি এক্সচেঞ্জ গড়ে তুলেছিলেন। এর প্রধান অফিস পুরানা পল্টনে ছিল এবং শাখা ছিল দুবাই, কুয়ালালামপুর, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর ও ইস্তাম্বুলে। সাবেক এডিসি সাইফুল ইসলামের দুই ভাই এই মানি এক্সচেঞ্জ পরিচালনা করতেন।

দুদকের মামলা ও সম্পদ জব্দ

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হারুন অর রশীদ, তার স্ত্রী শিরিন আক্তার এবং তার ভাই এ বি এম শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছে।

মামলার এজাহারে হারুনের বিরুদ্ধে ১৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা, তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ১০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে ১২ কোটি ৯৬ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত হারুন ও তার ভাইয়ের নামে থাকা মোট ২১টি ব্যাংক হিসাব (হারুনের ১০টি ও শাহরিয়ারের ১১টি) অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়াও ঢাকার উত্তরা, গুলশান, খিলক্ষেত ও জোয়ারসাহারাসহ বিভিন্ন স্থানে থাকা স্থাবর সম্পদ জব্দ করার আদেশও দেওয়া হয়েছে।

RELATED ARTICLES

Most Popular