অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ শুক্রবার ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জাতীয় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন - ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষরকে ‘নতুন বাংলাদেশের সূচনা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
আজ শুক্রবার (১৭ অক্টোবর ২০২৫) ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জাতীয় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।
অধ্যাপক ইউনূস আশা প্রকাশ করেন যে, দলগুলোর মধ্যে এই সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে যে ঐক্য তৈরি হলো, সেই সুরই দেশকে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাবে। এ জন্য তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
সনদের পটভূমি ও স্বাক্ষরকারী দলসমূহ
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার যে সংস্কার কমিশনগুলো গঠন করেছিল, তাদের সুপারিশমালা একসঙ্গে করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এই জুলাই সনদ প্রণয়ন করেছে। অধ্যাপক ইউনূস নিজেই এই কমিশনের প্রধান।
নানা মতভেদ পেরিয়ে প্রণীত এই সনদে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ ২৫টি দল স্বাক্ষর করেছে।
তবে, জুলাই অভ্যুত্থানের সামনের কাতারে থাকা তরুণদের গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং চারটি বাম দল এই সনদে স্বাক্ষর করেনি এবং অনুষ্ঠানেও অংশ নেয়নি।
কোন দলের কারা কারা জুলাই সনদে সই করল, তা দেখাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ শুক্রবার ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হয় – ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
প্রধান উপদেষ্টার গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য
নবজন্ম ও সূচনা: অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমাদের জন্য আজকে নবজন্ম। আমাদের নবজন্ম হলো আজকে। এই স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করলাম। সেটা যেন সঠিকভাবে আমরা যেতে পারি। আমরা একমত হয়েছি সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
তরুণদের ভূমিকা: তিনি বলেন, যেই তরুণেরা এই পরিবর্তন সম্ভব করেছে, তারাই আবার বাংলাদেশকে নতুন করে গড়বে, নেতৃত্ব দেবে এবং পথ দেখাবে।
নির্বাচন ও ঐক্য: প্রধান উপদেষ্টা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, “যে সুর আজকে আমরা এখানে বাজালাম, সেই সুর নিয়ে আমরা নির্বাচনের দিকে যাব। ঐক্যের সুর, ঐক্যের মধ্য দিয়ে আমরা নির্বাচনের দিকে যাব। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে এবং এই ঐক্য যেন বজায় থাকে।”
ঐকমত্য কমিশনের সাফল্য: তিনি উল্লেখ করেন যে, ‘ভয়ে ভয়ে’ ঐকমত্য কমিশনের যাত্রা শুরু হলেও, এটি নানা মতানৈক্য পেরিয়ে দলগুলোকে এক করতে পেরেছে, যা ইতিহাসে ‘অক্ষয়’ হয়ে থাকবে।
বর্বরতা থেকে সভ্যতা: তিনি মন্তব্য করেন, “আমরা এক বর্বর জগতে ছিলাম। যেখানে আইনকানুন ছিল না। মানুষের ইচ্ছায় যা ইচ্ছা তা করতে পারত। এখন আমরা সভ্যতায় আসলাম, কাগজে আমরা প্রমাণ করলাম, সেই সভ্যতা আমরা নিয়ে আসলাম এবং কাজে প্রমাণ করতে হবে যে আমরা সেই সভ্যতা অর্জন করেছি।”
অন্যান্য বিষয়: তিনি জানান, ঐকমত্যের বিষয়গুলো পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা অনুপ্রাণিত হতে পারে। এছাড়াও, বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের মালিকানা ও সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের বিষয়েও সনদে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তিনি আশা করেন, এই সনদ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠান থেকে গোটা জাতি অনুপ্রাণিত হবে এবং অন্যান্য দেশও বাংলাদেশের কাছ থেকে শিখতে আসবে।